
খুলনায় প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এসে নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন রাজধানীর বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজকীর আহমেদ (২২)। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় খুলনার ভৈরব নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত তাজকীরের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ তার পরনে থাকা শার্ট-প্যান্ট দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাজকীর ঢাকার ধানমন্ডি থেকে খুলনায় আসেন। প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার ডাকে তিনি খালিশপুর থানার গোয়ালখালী এলাকায় মামার বাড়িতে ওঠেন।
সেখান থেকে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
তাজকীর নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা মুরাদ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে, ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ তদন্তে জানতে পারে—
🔹 প্রেমিকা সীমার মোবাইল ব্যবহার করে তার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভি তাজকীরকে ডেকে আনেন।
🔹 পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি ও তার তিন বন্ধু তাজকীরকে অপহরণ করে।
🔹 হাত-পা বেঁধে, মুখে টেপ পেঁচিয়ে, লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
🔹 এরপর গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয় নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য।
🔹 লাশ একটি বস্তায় ভরে ভৈরব নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সীমার সঙ্গে তিন বছর আগে অভির পরিবারের অমতে বিয়ে হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে এবং অভি দেশের বাইরে চলে যান।
এরপর সীমার সঙ্গে তাজকীরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু অভি দেশে ফিরে আসার পর আবার সীমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় তৈরি হয়।
এতে একটি জটিল প্রেমের ত্রিভুজ সৃষ্টি হয়। অভি বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিশোধ নিতে তাজকীরকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এ ঘটনায় সীমাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
📌 গ্রেপ্তারকৃতরা:
✔ প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমা
✔ অভির মা লাবনী বেগম
✔ হত্যায় সহায়তাকারী শহিদুল ইসলাম সাহিদ
✔ অভির বন্ধু মশিউর রহমান জিতু ও রিয়াদ কাজী
🚨 অভি এখনও পলাতক। তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান—
“তাজকীর হত্যার নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। এক প্রেমের সম্পর্কের জেরে পরিকল্পিতভাবে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামি ইসমাইল হোসেন অভিকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
প্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় এসে প্রাণ হারালেন তাজকীর। একটি মিথ্যা ভালোবাসার আড়ালে লুকিয়ে ছিল নিষ্ঠুর প্রতিশোধ। এ হত্যাকাণ্ড নতুন করে প্রেমের নামে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা ও সহিংসতার ভয়ঙ্কর দিকটি সামনে নিয়ে এলো।
পুলিশ অভিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে তো? নাকি এই অপরাধের বিচারও হারিয়ে যাবে অন্ধকারের অতল গহ্বরে?