Dhaka , বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মারা গেছে আছিয়া

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • ১০৩ Time View

মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন

হাসপাতালের ঠান্ডা বিছানাটাই হয়ে উঠেছিল তার শেষ আশ্রয়। সপ্তাহখানেক ধরে জীবন-মৃত্যুর এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল ছোট্ট মেয়েটি। শরীরের প্রতিটি কোষ বেঁচে থাকার জন্য লড়ছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। মাত্র ৮ বছরের অবুঝ শিশুটি হেরে গেলো নির্মমতার কাছে, হেরে গেলো মানুষের অসভ্যতার কাছে।

 

আজ (১৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিরতরে থেমে গেল তার নিঃশ্বাস। মেয়েটিকে বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো, দেশবাসীর হাজারো প্রার্থনা পৌঁছালো না সৃষ্টিকর্তার দরবারে।

 

গতকাল চারবার হার্ট অ্যাটাক করেছিল তার। আজও হলো দুবার। প্রথমবারের পরও সে লড়ল, দ্বিতীয়বার যখন হার্ট অ্যাটাক হলো, তখন ৩০ মিনিট ধরে ডাক্তাররা চেষ্টা চালালেন, শেষমেষ ফিরে এলো তার হৃদস্পন্দন! কিন্তু তারপর?

 

তার ব্রেন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। শরীরে কোনো সাড়া নেই, রক্তচাপ দ্রুত কমতে থাকল। শেষবারের মতো যখন তার হৃদস্পন্দন থেমে গেলো, তখন ডাক্তাররা জানালেন—আর কিছু করার নেই। নিষ্পাপ এই শিশুটির শরীরের মতোই হয়তো আকাশের গায়েও কালো মেঘ জমে উঠেছিল।

 

এই মেয়েটির তো এখন পুতুল নিয়ে খেলার কথা ছিল! স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল, মা-বাবার আঁচলে মুখ লুকিয়ে দুষ্টুমি করার কথা ছিল। অথচ, তাকে নৃশংসভাবে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলা হলো!

 

গত ৬ মার্চ, মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে। পরিবারের অভিযোগ, সেখানে ঘাতকেরা তাকে ধর্ষণ করে। তার নিষ্পাপ দেহটা তখনই হয়তো মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর শুরু হয় আরেকটি যুদ্ধ—চিকিৎসকদের যুদ্ধ, পরিবারের যুদ্ধ, দেশবাসীর যুদ্ধ। কিন্তু আমরা হেরে গেলাম।

 

তার মা-বাবা হয়তো এখনো ভাবছেন—”আমাদের ছোট্ট মেয়েটা কেমন ছিল! কেমন করে হাসতো! কেমন করে কাঁদতো! শেষবারের মতো আরেকবার যদি জড়িয়ে ধরা যেত…”

 

কিন্তু, সেটা আর কখনোই হবে না।

 

এই সমাজ কি তার জন্য কিছু করবে? ধর্ষকেরা জেলে আছে, হয়তো বিচারের নামে বছরের পর বছর মামলা চলবে। হয়তো একসময় সবাই ভুলে যাবে। কিন্তু, সেই শিশুটির মা-বাবা ভুলবে না! তার শূন্য বিছানাটা, ছোট্ট জামা-কাপড়গুলো, বই-খাতা—এসব কিছুই মনে করিয়ে দেবে এক নির্মম পরিণতির কথা।

 

এই সমাজ কি আরেকটি ‘নির্ভয়া’র জন্ম দেবে? নাকি আমরা এবার অন্তত সত্যিকারের ন্যায়বিচার দেখব?

 

আজ আকাশটাও হয়তো কাঁদছে। কাঁদছে, কারণ এই পৃথিবী আরেকবার তার নিষ্পাপ এক শিশুকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলো।

 

চিরবিদায়, ‘নির্ভয়া’। তোমার জন্য এই পৃথিবী নিরাপদ ছিল না। আমরা তোমাকে বাঁচাতে পারিনি, আমাদের ক্ষমা করো!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মারা গেছে আছিয়া

Update Time : ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

হাসপাতালের ঠান্ডা বিছানাটাই হয়ে উঠেছিল তার শেষ আশ্রয়। সপ্তাহখানেক ধরে জীবন-মৃত্যুর এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল ছোট্ট মেয়েটি। শরীরের প্রতিটি কোষ বেঁচে থাকার জন্য লড়ছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। মাত্র ৮ বছরের অবুঝ শিশুটি হেরে গেলো নির্মমতার কাছে, হেরে গেলো মানুষের অসভ্যতার কাছে।

 

আজ (১৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিরতরে থেমে গেল তার নিঃশ্বাস। মেয়েটিকে বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো, দেশবাসীর হাজারো প্রার্থনা পৌঁছালো না সৃষ্টিকর্তার দরবারে।

 

গতকাল চারবার হার্ট অ্যাটাক করেছিল তার। আজও হলো দুবার। প্রথমবারের পরও সে লড়ল, দ্বিতীয়বার যখন হার্ট অ্যাটাক হলো, তখন ৩০ মিনিট ধরে ডাক্তাররা চেষ্টা চালালেন, শেষমেষ ফিরে এলো তার হৃদস্পন্দন! কিন্তু তারপর?

 

তার ব্রেন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। শরীরে কোনো সাড়া নেই, রক্তচাপ দ্রুত কমতে থাকল। শেষবারের মতো যখন তার হৃদস্পন্দন থেমে গেলো, তখন ডাক্তাররা জানালেন—আর কিছু করার নেই। নিষ্পাপ এই শিশুটির শরীরের মতোই হয়তো আকাশের গায়েও কালো মেঘ জমে উঠেছিল।

 

এই মেয়েটির তো এখন পুতুল নিয়ে খেলার কথা ছিল! স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল, মা-বাবার আঁচলে মুখ লুকিয়ে দুষ্টুমি করার কথা ছিল। অথচ, তাকে নৃশংসভাবে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলা হলো!

 

গত ৬ মার্চ, মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে। পরিবারের অভিযোগ, সেখানে ঘাতকেরা তাকে ধর্ষণ করে। তার নিষ্পাপ দেহটা তখনই হয়তো মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর শুরু হয় আরেকটি যুদ্ধ—চিকিৎসকদের যুদ্ধ, পরিবারের যুদ্ধ, দেশবাসীর যুদ্ধ। কিন্তু আমরা হেরে গেলাম।

 

তার মা-বাবা হয়তো এখনো ভাবছেন—”আমাদের ছোট্ট মেয়েটা কেমন ছিল! কেমন করে হাসতো! কেমন করে কাঁদতো! শেষবারের মতো আরেকবার যদি জড়িয়ে ধরা যেত…”

 

কিন্তু, সেটা আর কখনোই হবে না।

 

এই সমাজ কি তার জন্য কিছু করবে? ধর্ষকেরা জেলে আছে, হয়তো বিচারের নামে বছরের পর বছর মামলা চলবে। হয়তো একসময় সবাই ভুলে যাবে। কিন্তু, সেই শিশুটির মা-বাবা ভুলবে না! তার শূন্য বিছানাটা, ছোট্ট জামা-কাপড়গুলো, বই-খাতা—এসব কিছুই মনে করিয়ে দেবে এক নির্মম পরিণতির কথা।

 

এই সমাজ কি আরেকটি ‘নির্ভয়া’র জন্ম দেবে? নাকি আমরা এবার অন্তত সত্যিকারের ন্যায়বিচার দেখব?

 

আজ আকাশটাও হয়তো কাঁদছে। কাঁদছে, কারণ এই পৃথিবী আরেকবার তার নিষ্পাপ এক শিশুকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলো।

 

চিরবিদায়, ‘নির্ভয়া’। তোমার জন্য এই পৃথিবী নিরাপদ ছিল না। আমরা তোমাকে বাঁচাতে পারিনি, আমাদের ক্ষমা করো!