Dhaka , বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে কিশোরী রোজিনার অমানবিক নির্যাতন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
  • ১৫৮ Time View

চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে কিশোরী রোজিনার অমানবিক নির্যাতন

রোজিনার দুর্দশার সূচনা হয় যখন তার মামা রুবেল মোল্লা ও মামি রোকেয়া বেগম তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। ঢাকায় বিউটি পার্লারে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হলেও, বাস্তবে তাকে বন্দি করা হয় চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসা সড়কের বাসায়। সেখানে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।

 

প্রতিদিনের শাস্তির তালিকায় ছিল গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, শিলপাটার আঘাত, কাপড় কাঁচার গুড়ো খাওয়ানো! সামান্য ভুল করলেই বেধড়ক মারধর। ফোন ব্যবহার কিংবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল তার জন্য।

 

বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছিল রোজিনার। তবুও, সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে। বৃহস্পতিবার, ইফতারের আগে বাসার সবাই ব্যস্ত থাকায়, সাহস করে দরজা খুলে পালিয়ে যায় রোজিনা। দৌড়ে বেরিয়ে এসে সড়কের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ে। স্থানীয়রা যখন তার দিকে এগিয়ে যায়, তখন সে নির্যাতনের কথা জানায়।

 

স্থানীয় কয়েকজন তরুণ বিষয়টি বুঝতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। দ্রুত চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর, পুলিশ রোজিনাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

 

পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে চরম অমানবিক নির্যাতনের চিত্র। রোজিনার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মামা রুবেল মোল্লা ও মামি রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। রাতেই অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে পুলিশ।

 

শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব হাসপাতালে যান রোজিনার পাশে দাঁড়াতে। তিনি রোজিনার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন, তার মায়ের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন এবং ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন।

 

আটকের পর আদালতে হাজির করা হয় রুবেল মোল্লা ও রোকেয়া বেগমকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামি রোকেয়া নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘শাসন করার জন্য মাঝেমধ্যে সামান্য মারধর করতাম। এত বড় কিছু হয়নি।’ তবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিহ্ন রোজিনার দেহে স্পষ্ট ছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

 

চিকিৎসকের মতে, রোজিনার শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট, তবে সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু মানসিক আঘাত তাকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। সমাজের অসংবেদনশীলতার বলি হয়েছিল সে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আলো তার জন্য এসেছে।

 

এ ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি সমাজের চিত্র। এমন নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন ও সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন। রোজিনার মতো আর কেউ যেন এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার না হয়, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের অঙ্গীকার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে কিশোরী রোজিনার অমানবিক নির্যাতন

Update Time : ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

রোজিনার দুর্দশার সূচনা হয় যখন তার মামা রুবেল মোল্লা ও মামি রোকেয়া বেগম তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। ঢাকায় বিউটি পার্লারে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হলেও, বাস্তবে তাকে বন্দি করা হয় চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসা সড়কের বাসায়। সেখানে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।

 

প্রতিদিনের শাস্তির তালিকায় ছিল গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, শিলপাটার আঘাত, কাপড় কাঁচার গুড়ো খাওয়ানো! সামান্য ভুল করলেই বেধড়ক মারধর। ফোন ব্যবহার কিংবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল তার জন্য।

 

বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছিল রোজিনার। তবুও, সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে। বৃহস্পতিবার, ইফতারের আগে বাসার সবাই ব্যস্ত থাকায়, সাহস করে দরজা খুলে পালিয়ে যায় রোজিনা। দৌড়ে বেরিয়ে এসে সড়কের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ে। স্থানীয়রা যখন তার দিকে এগিয়ে যায়, তখন সে নির্যাতনের কথা জানায়।

 

স্থানীয় কয়েকজন তরুণ বিষয়টি বুঝতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। দ্রুত চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর, পুলিশ রোজিনাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

 

পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে চরম অমানবিক নির্যাতনের চিত্র। রোজিনার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মামা রুবেল মোল্লা ও মামি রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। রাতেই অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে পুলিশ।

 

শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব হাসপাতালে যান রোজিনার পাশে দাঁড়াতে। তিনি রোজিনার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন, তার মায়ের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন এবং ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন।

 

আটকের পর আদালতে হাজির করা হয় রুবেল মোল্লা ও রোকেয়া বেগমকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামি রোকেয়া নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘শাসন করার জন্য মাঝেমধ্যে সামান্য মারধর করতাম। এত বড় কিছু হয়নি।’ তবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিহ্ন রোজিনার দেহে স্পষ্ট ছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

 

চিকিৎসকের মতে, রোজিনার শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট, তবে সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু মানসিক আঘাত তাকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। সমাজের অসংবেদনশীলতার বলি হয়েছিল সে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আলো তার জন্য এসেছে।

 

এ ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি সমাজের চিত্র। এমন নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন ও সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন। রোজিনার মতো আর কেউ যেন এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার না হয়, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের অঙ্গীকার।