
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। বহু প্রতীক্ষিত পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রোববার দুপুর ২টার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন যে, তার দেশ এখন থেকে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তার বক্তৃতায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন ও সংঘাতের মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকার অস্বীকার করা যায় না। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও স্থায়ী শান্তির স্বার্থে আমরা আজ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।”
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, একই দিনে বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ঘোষণা আসে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে। এ দুই দেশও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী তিন রাষ্ট্র একযোগে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াল।
এ ঘোষণার পরপরই বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। আরব লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ইউরোপের বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, পশ্চিমা শক্তিধর তিন রাষ্ট্রের একযোগে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনা ভবিষ্যতের শান্তি প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “এ সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনে আলো দেখাবে। এখন সময় এসেছে সবাইকে সমাধানের টেবিলে বসার।”
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা আশা করি অন্যান্য দেশও দ্রুত এই পথ অনুসরণ করবে।”
গাজা ও পশ্চিম তীরজুড়ে সাধারণ জনগণ এ খবর শুনে আনন্দ প্রকাশ করে। অনেক শহরে মিছিল, পতাকা মিছিল এবং উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখো মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পদক্ষেপ শুধু ফিলিস্তিন নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশগুলোর স্বীকৃতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াবে। তবে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা ও বিশ্বশক্তির সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।
দীর্ঘ দশকের দখলদারিত্ব ও সংঘাতের পর অবশেষে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র স্বীকৃতি পেলো পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছ থেকে। এখন বিশ্ববাসী তাকিয়ে আছে, এ ঐতিহাসিক স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।