নিজস্ব প্রতিবেদক
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ভাটেরা-ভুকশিমইল সড়কটি যেন চার গ্রামের মানুষের ‘জীবনরেখা’। বেরকুড়ী, শশারকান্দি, খামাউরা ও শাহামীর গ্রামের হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বাজার ও নানা কাজে চলাচল করে থাকেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এ সড়কের বেহাল অবস্থা ভাটি এলাকার মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনছে।
প্রতিদিন সকাল হলে দেখা যায়, এ সড়ক দিয়েই শিশুদের দল মাদ্রাসা ও স্কুলে যাচ্ছে। কলেজগামী শিক্ষার্থীরা হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছেন শহরের দিকে। শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এই পথের উপর নির্ভরশীল। অথচ সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে তাদের প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুরুতে রাস্তার কাজে হাত দেওয়া হলেও টেকসই কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা নামলেই সব ভেসে যায়। হাকালুকি হাওরের ঢেউ এসে রাস্তার মাটি খেয়ে নেয়, পাশের জমিনে ভরাট হয়ে যায় কাদায়। কোনো গার্ডওয়াল নেই, নেই কোনো সাপোর্ট—ফলে পুরো রাস্তা ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
বেরকুড়ী গ্রামের বাসিন্দা শাহ তাহেরুল বলেন, “আমরা বছর বছর দেখি সামান্য কাজ হয়, আবার বর্ষায় সব শেষ হয়ে যায়। অথচ এই রাস্তা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।

ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি জানানো হলে বলা হয়, এটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (LGED) আওতায়। কিন্তু এলজিইডির কাজও স্থায়ী সমাধান আনতে পারছে না। ফলে ভাটি এলাকার মানুষ যেন এক প্রকার ‘অবহেলার শিকার’।
শশারকান্দি গ্রামের গৃহবধূ জামিলা বেগমের আক্ষেপ, “রাস্তা ভালো না থাকায় আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। বর্ষার সময় তো একেবারেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যদি টেকসই কাজ হতো তাহলে আমাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হতো।”
খামাউরা গ্রামের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, রাস্তার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়াতেও সমস্যা হয়। এতে স্থানীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভাটেরা-ভুকশিমইল সড়কের চার গ্রামের মানুষের দাবি এখন একটাই—এই রাস্তার পাশে টেকসই গার্ডওয়াল নির্মাণ করা। স্থানীয়রা মনে করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা ছাড়া টেকসই ব্যবস্থা সম্ভব নয়। আর টেকসই ব্যবস্থা না হলে প্রতিবছরই বর্ষায় হাওরের ঢেউ তাদের স্বপ্নকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
ভুক্তভোগীরা ভাটেরা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা চাই টেকসই উন্নয়ন। উন্নয়ন মানে শুধু সাময়িক সংস্কার নয়। আমাদের একমাত্র দাবি—এই সড়ককে স্থায়ীভাবে রক্ষা করা হোক।”
ভাটেরার মানুষ আজও অপেক্ষায়—কবে তাদের এই দুর্ভোগ লাঘব হবে। কবে তারা নিশ্চিন্তে তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে পারবে, কবে কৃষিপণ্য সহজে বাজারে পৌঁছাবে, কবে তাদের জীবন থেকে দুর্ভোগের নামকরণ মুছে যাবে।
অভিযোগ আর অপেক্ষার মাঝেই বছর ঘুরে আবার নতুন বর্ষা আসে। আর হাওরের ঢেউয়ে ভেসে যায় উন্নয়নের স্বপ্ন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শেখ সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী, মোবাইলঃ 01712-823054
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।