Dhaka , বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গর্তে জীবন ধারণ করা সেই গোপাল সাঁওতালের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক

স্টার রিপোর্টার

কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া চা-বাগানের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া গোপাল সাঁওতাল (পিতা-অনিল ম্ররং, মাতা-সঞ্চরিয়া সাঁওতাল, জন্ম তারিখ: ০৪ জানুয়ারি ২০২২) জন্মের পর থেকেই বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। তিন বছরের এই শিশুটি হাঁটাচলা থেকে শুরু করে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা ও চলাফেরায়ও সক্ষম নয়,তাকে মা সাংসারিক কাজের সময় ও গোপালের খাওয়ার সময় গর্তে রাখতে হত, যা কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার হয়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। চা-বাগানের শ্রমিক হিসেবে তার বাবা-মা অতি কষ্টে সংসার চালালেও সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে ছোট্ট গোপাল।

এই পরিস্থিতির কথা জানাজানি হলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আজ বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গোপালের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে শিশুটিকে সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড)-এর মৌলভীবাজার শাখায় তিন মাসব্যাপী চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, বিশেষায়িত সেবা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবে জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার।

জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “একটি শিশুর জীবন যেন প্রতিবন্ধকতায় আটকে না যায়, সে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে—এ দায়িত্ব সমাজের সবার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোপালের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি চিকিৎসার মাধ্যমে সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

গোপালের পরিবার জেলা প্রশাসকের এই মানবিক পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, “আমরা কখনও ভাবিনি গোপালের চিকিৎসা সম্ভব হবে। আজ জেলা প্রশাসক আমাদের সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন—এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।” এই উদ্যোগ মৌলভীবাজার জেলায় মানবিক কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা যেমন কার্যকরী, তেমনি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে জানান স্থানীয়রা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

গর্তে জীবন ধারণ করা সেই গোপাল সাঁওতালের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক

Update Time : ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

স্টার রিপোর্টার

কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া চা-বাগানের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া গোপাল সাঁওতাল (পিতা-অনিল ম্ররং, মাতা-সঞ্চরিয়া সাঁওতাল, জন্ম তারিখ: ০৪ জানুয়ারি ২০২২) জন্মের পর থেকেই বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। তিন বছরের এই শিশুটি হাঁটাচলা থেকে শুরু করে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা ও চলাফেরায়ও সক্ষম নয়,তাকে মা সাংসারিক কাজের সময় ও গোপালের খাওয়ার সময় গর্তে রাখতে হত, যা কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার হয়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। চা-বাগানের শ্রমিক হিসেবে তার বাবা-মা অতি কষ্টে সংসার চালালেও সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে ছোট্ট গোপাল।

এই পরিস্থিতির কথা জানাজানি হলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আজ বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গোপালের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে শিশুটিকে সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড)-এর মৌলভীবাজার শাখায় তিন মাসব্যাপী চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, বিশেষায়িত সেবা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবে জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার।

জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “একটি শিশুর জীবন যেন প্রতিবন্ধকতায় আটকে না যায়, সে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে—এ দায়িত্ব সমাজের সবার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোপালের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি চিকিৎসার মাধ্যমে সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

গোপালের পরিবার জেলা প্রশাসকের এই মানবিক পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, “আমরা কখনও ভাবিনি গোপালের চিকিৎসা সম্ভব হবে। আজ জেলা প্রশাসক আমাদের সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন—এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।” এই উদ্যোগ মৌলভীবাজার জেলায় মানবিক কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা যেমন কার্যকরী, তেমনি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে জানান স্থানীয়রা।