Dhaka , বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৪ ঘন্টা পর উদ্ধার চট্টগ্রামে হিজলা খালে নিখোঁজ সেই শিশুটি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৬৪ Time View

১৪ ঘন্টা পর উদ্ধার চট্টগ্রামে হিজলা খালে নিখোঁজ সেই শিশুটি

চট্টগ্রামের কাপাসগোলার হিজলা খাল যেন আজ আরও নীরব, আরও ভারী। কারণ, সেই খাল থেকে আজ সকালে উদ্ধার করা হলো মাত্র ছয় মাস বয়সী একটি নিষ্পাপ শিশুর নিথর দেহ। তার নাম ছিল সেহরিস—ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা এক ছোট্ট মুখ, যার জীবন থেমে গেল দুর্ঘটনার নির্মম ছোবলে।

 

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে, একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন সেহরিসের মা। তার কোলে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল ছোট্ট সেহরিস। কিন্তু ভাগ্য যেন অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। রিকশাটি আচমকা উল্টে গিয়ে মা ও শিশু দু’জনেই হিজলা খালে পড়ে যান। স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে মাকে উদ্ধার করলেও, খালের ময়লা জলে হারিয়ে যায় সেহরিস।

 

সেই রাতেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শুরু করে তৎপরতা। চারপাশে আতঙ্ক, কান্না, প্রার্থনা আর একটাই অপেক্ষা—ছোট্ট সেহরিসকে ফিরে পাওয়ার। রাত পেরিয়ে যায়, একটানা চলে উদ্ধার অভিযান। আশেপাশের খাল, ড্রেন, প্রতিটি গলি তল্লাশি চলে। সকালের আলোয় নতুন করে শুরু হয় তল্লাশি, আর সেই সকালেই, এক মুহূর্ত থেমে যায় পৃথিবীর সব শব্দ।

 

১৪ ঘণ্টা পর, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা হিজলা খাল থেকে তুলে আনে সেহরিসের নিথর দেহ। তার ছোট্ট শরীরটি নিস্তব্ধ, তার চোখ আর খোলে না, মুখে কোনো হাসি নেই—শুধু নিরব কান্নার ছায়া।

 

চোখের সামনে সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা। আর সেই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত কেউই। ছোট্ট সেহরিসের বিদায়ে কেঁদেছে পুরো এলাকা, কেঁদেছে চট্টগ্রাম।

 

ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থলে এসে পরিচ্ছন্নকর্মী ও উদ্ধারকারী দলকে আহ্বান করেন। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় মানুষ সবাই একজোট হয়ে চেষ্টা চালায়। কিন্তু, নালার ভেতর জমে থাকা আবর্জনা ও ময়লা সেই চেষ্টাকে বারবার ঠেকিয়ে দেয়।

 

আজকের সকালটা কেবল আরেকটি দিন নয়—এটা এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়ের সকাল। একটি পরিবারের, একটি মায়ের, একটি শহরের বুকচেরা কান্নার দিন।

 

এ ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়—এটা আমাদের অব্যবস্থাপনার নির্মম পরিণতি, যা একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার, আর ঘুম ভাঙানোর—এই শহরে যেন আর কোনো সেহরিস হারিয়ে না যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১৪ ঘন্টা পর উদ্ধার চট্টগ্রামে হিজলা খালে নিখোঁজ সেই শিশুটি

Update Time : ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

চট্টগ্রামের কাপাসগোলার হিজলা খাল যেন আজ আরও নীরব, আরও ভারী। কারণ, সেই খাল থেকে আজ সকালে উদ্ধার করা হলো মাত্র ছয় মাস বয়সী একটি নিষ্পাপ শিশুর নিথর দেহ। তার নাম ছিল সেহরিস—ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা এক ছোট্ট মুখ, যার জীবন থেমে গেল দুর্ঘটনার নির্মম ছোবলে।

 

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে, একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন সেহরিসের মা। তার কোলে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল ছোট্ট সেহরিস। কিন্তু ভাগ্য যেন অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। রিকশাটি আচমকা উল্টে গিয়ে মা ও শিশু দু’জনেই হিজলা খালে পড়ে যান। স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে মাকে উদ্ধার করলেও, খালের ময়লা জলে হারিয়ে যায় সেহরিস।

 

সেই রাতেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শুরু করে তৎপরতা। চারপাশে আতঙ্ক, কান্না, প্রার্থনা আর একটাই অপেক্ষা—ছোট্ট সেহরিসকে ফিরে পাওয়ার। রাত পেরিয়ে যায়, একটানা চলে উদ্ধার অভিযান। আশেপাশের খাল, ড্রেন, প্রতিটি গলি তল্লাশি চলে। সকালের আলোয় নতুন করে শুরু হয় তল্লাশি, আর সেই সকালেই, এক মুহূর্ত থেমে যায় পৃথিবীর সব শব্দ।

 

১৪ ঘণ্টা পর, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা হিজলা খাল থেকে তুলে আনে সেহরিসের নিথর দেহ। তার ছোট্ট শরীরটি নিস্তব্ধ, তার চোখ আর খোলে না, মুখে কোনো হাসি নেই—শুধু নিরব কান্নার ছায়া।

 

চোখের সামনে সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা। আর সেই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত কেউই। ছোট্ট সেহরিসের বিদায়ে কেঁদেছে পুরো এলাকা, কেঁদেছে চট্টগ্রাম।

 

ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থলে এসে পরিচ্ছন্নকর্মী ও উদ্ধারকারী দলকে আহ্বান করেন। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় মানুষ সবাই একজোট হয়ে চেষ্টা চালায়। কিন্তু, নালার ভেতর জমে থাকা আবর্জনা ও ময়লা সেই চেষ্টাকে বারবার ঠেকিয়ে দেয়।

 

আজকের সকালটা কেবল আরেকটি দিন নয়—এটা এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়ের সকাল। একটি পরিবারের, একটি মায়ের, একটি শহরের বুকচেরা কান্নার দিন।

 

এ ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়—এটা আমাদের অব্যবস্থাপনার নির্মম পরিণতি, যা একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার, আর ঘুম ভাঙানোর—এই শহরে যেন আর কোনো সেহরিস হারিয়ে না যায়।